ইলিশ মাছকে ব্রাহ্মণ কেন বলা হয়?
ইলিশ মাছকে ব্রাহ্মণ” বলা হয় – এই উক্তিটি বহুদিন ধরে বাঙালি সংস্কৃতিতে প্রচলিত। কিন্তু এই অদ্ভুত নামকরণের পেছনে আসলে কী রহস্য লুকিয়ে আছে? ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদনে আমরা সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করব। ইতিহাসের সন্ধান: প্রাচীনকাল: অনেকে মনে করেন, হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত ‘ইলিশ’ নামক ঋষির নামানুসারে এই মাছের নামকরণ করা হয়েছে। ঐ ঋষি ব্রাহ্মণ জাতির ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।ঔপনিবেশিক যুগ: ব্রিটিশ শাসনকালে, উচ্চবর্ণের মানুষ, বিশেষ করে ব্রাহ্মণরা, ইলিশ মাছ খেতে পছন্দ করতেন। তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের কারণে তারা নিয়মিত এই সুস্বাদু মাছ কিনতে পারতেন। অন্যদিকে, নিম্নবর্ণের মানুষের জন্য ইলিশ ছিল বিলাসবহুল খাবার।ধর্মীয় বিশ্বাস: কিছু লোকের বিশ্বাস, ইলিশ মাছ দেবতাদের প্রিয়। তাই ব্রাহ্মণরা, যারা ঈশ্বরের পূজারী হিসেবে বিবেচিত হতেন, তারা নিয়মিত ইলিশ মাছ ভোগ করতেন।সাংস্কৃতিক তাৎপর্য: বাঙালি সংস্কৃতিতে, ইলিশ মাছ শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি একটি আবেগ। বর্ষাকালে যখন ইলিশ মাছের আগমন ঘটে, তখন বাঙালিদের মনে উৎসবের আমেজ আসে।ইলিশ মাছ বিভিন্ন রীতিতে রান্না করা হয় এবং প্রায় প্রতিটি বাঙালি পরিবারেই এর বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে।লেখক, কবি ও শিল্পীরা তাদের সৃষ্টিতে ইলিশ মাছকে অমর করে রেখেছেন। ইলিশ মাছকে “ব্রাহ্মণ” বলা হলেও, এর পেছনে কোন ধর্মীয় বা জাতিগত বৈষম্য নেই। বরং ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট এই নামকরণকে প্রভাবিত করেছে। আজকের দিনে, ইলিশ মাছ সকলের কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য এবং বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।