আধ্যাত্ম শক্তি হলো আসলে ‘আত্মা’র শক্তি
প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আছে বিরাট সম্ভাবনা। উপযুক্ত পরিবেশে মানুষ তার নিজস্ব শক্তির বিকাশ ঘটায়। এই শক্তি কিন্তু দৈহিক শক্তি নয়, আত্মার শক্তি। আধ্যাত্ম আপনাকে পরিবর্তিত করে অনুগত করে, আবার স্বাধীন করে। জীবনের প্রত্যেকটি জিনিষ, যা আমরা দেখতে পাই বা না পাই, তার স্বরুপ যেমন ভাবেই প্রকাশ পায় না কেন, তার অন্তর্নিহ্ত একটি শক্তি আছে, যাকে আমরা বলি আত্মা। এর অধ্যয়নই, আধ্যাত্ম। অধ্যয়ন কিন্তু পড়া নয়, বিষয়ের গভীরে গিয়ে, তাকে অনুভব করার চেষ্টা। এই অধ্যাত্ম শক্তির বিকাশের কথা রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ বার বার বলেছেন। আধ্যাত্মিক পথে চালতে পারলেই নিজের আভ্যন্তরিন আত্মার শক্তির বিকাশ ঘটানো সম্ভব। ভারতীয় বেদান্ত বলে – * প্রথম ধাপ হল সুদর্শন-ক্রিয়া শেখা। এই শক্তিসঞ্চারী শ্বাস প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের শরীর, মন ও আত্মা নিরাময় হয়ে ওঠে এবং আমাদের ভিতরের অবদমিত ভার ও উদ্বেগ সহজেই নির্মূল হয়ে যায়। * মৌনাভ্যাস বাহ্যিক অন্তরায় থেকে আমাদের চেতনা ও মনোযোগ সচেতনভাবে সরিয়ে আনার পদ্ধতি আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্তরে নতুন সজীবতা নিয়ে আসে। আমাদের ক্রিয়াশীল মনের ঊর্ধ্বে যাবার জন্য বিভিন্ন শৈলীর মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অসাধারণ শান্তি ও সজীব প্রাণময়তা অনুভব করে থাকি। * ধ্যানের গভীরে ডুবে যাবার জন্য যোগ্য আচার্য প্রদত্ত ‘গুরুমন্ত্র’র আবশ্যকতা আছে। সহজ সমাধি, ধ্যানে আমাদের যে সহজ একটি শব্দ শেখানো হয়, তা মনকে নিয়ে যায় অন্তরতম গভীরতায়। মন এবং স্নায়ুমন্ডল যখন ব্যাপ্ত নৈঃশব্দ্যে কিছুক্ষণের জন্য মগ্ন হয়ে যায়, তখন আমাদের চিত্তের উন্নতির সব অন্তরায় ধীরে ধীরে সরে যায়। * ব্লেসিং বা আশীর্বাদ নিয়ে আসে প্রাচুর্য আর তৃপ্তি এবং সেই সাথে আমাদের অভিজ্ঞতাকে পূর্ণতার মাত্রা যোগ করে। পূর্ণতার বোধ আমাদের চৈতন্যের এক অপূর্ব বৈশিষ্ট্য। এর দ্বারা আমরা আশীর্বাদের মাধ্যমে রোগপ্রশমনের শক্তি অর্জন করি। আশীর্বাদের শক্তি মানসিক সংবেদনশীলতার এক পূর্ণ প্রকাশ, যা আতুর-এর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে সেবার মধ্য দিয়ে শান্তি আর ঐক্যের ভাব নিয়ে আসে। * কৃতজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমাদের ফুলের মতো ফুটে ওঠা চেতনা পবিত্রতম ও সুন্দরতম মাত্রায় প্রকাশিত হয়। যে সব আচার্য বা গুরুরা পবিত্রতার ধারায় অমূল্য প্রজ্ঞা শাশ্বত সময়ের স্রোত ধরে আমাদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছেন, গুরুপূজার দ্বারা তাঁদের প্রতি আমরা আমাদের কৃতজ্ঞ প্রণতি জানাই। এভাবেই জীবনকে যদি সৎ ও সুন্দর পথে রাখা যায় এবং সঙ্গে আত্মার বিকাশ ঘটানো যায়, তাহলেই পরমাত্মার সঙ্গে সহজে মিলন সম্ভব। তাই দিনে কিছু সময়ের জন্য হলেও ধ্যান চর্চা করা আবশ্যক। নিজের আত্মাকে প্রদীপের শিখার মতো সব সময় উর্দ্ধে তুলে রাখুন।