কালনা পুরসভায় চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভোটাভুটি, চেয়ারম্যান হলেন বহিস্কৃত তৃণমূল কাউন্সিলার: মন্ত্রীর ধমক তোয়াক্কা না করেই ঘটল ঘটনাটি
TODAYS বাংলা: রাজ্যের মন্ত্রীর সামনেই তৃণমূল কংগ্রেস দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন পুর ভোটে নির্বাচিত তৃণমূলেরই কাউন্সিলাররা।
আর তার কারণেই বুধবার পূর্ব বর্ধমানের কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান হতে পারলেন না দলের মনোনীত কাউন্সিলার আনন্দ দত্ত। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ রুখে দাঁড়িয়েও বাগে আনতে পারেন না দলের বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলারদের। ভোটাভুটিতে ১৮ জন কাউন্সিলারের মধ্যে দলের বিক্ষুব্ধ ১২ জন কাউন্সিলার আনন্দ দত্তকে হারিয়ে দিয়ে তপন পোড়েলকে চেয়ারম্যান মনোনীত করেন।
যদিও পরে কালনার বোর্ড গঠন প্রক্রিয়াই বাতিল করে দেওয়া হয়। এইসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদে সারাদিন উত্তপ্ত হয়ে থাকে কালনা পুরসভা অফিস চত্ত্বর। একই রকম ভাবে এদিন ক্ষোভের আঁচ ছড়ায় বর্ধমান পুরসভাতেও। ক্ষোভে শপথ গ্রহনেই অংশ নিলেন না দলের কাউন্সিলার অরুপ দাস। পুরভোটের পর পুরসভার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হওয়া নিয়ে তৃণমূলের এমন নজিরবিহীন গোষ্ঠীদ্বন্দ প্রকাশ্যে চলে আসায় উত্ফুল্ল বিরোধী শিবির।
রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের নিজের গড় হিসাবেই পরিচিত কালনা পুরসভা। সেখানকার একটা বড় অংশের দলীয় কাউন্সিলার দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করায় বেজায় চটেছেন তিনি । এদিন তিনি স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন,কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনে যাঁরা দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলারদের সাসপেন্ড করা হবে বলেও স্বপনবাবু জানিয়েছেন।
রাজ্যের পুর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এদিন কলকাতায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন,’এই ঘটনা নিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি যে যে পুরসভায় দলের মনোনিত কাউন্সিলারকে চেয়ারম্যান হতে না দিয়ে অন্যকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে সেই সব পুরসভায় অনাস্থা আনা হবে’ ।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে মঙ্গলবার বর্ধমান ও কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের নাম জানিয়ে দেওয়া হয় । বর্ধমান পৌরসভার চেয়ারম্যান করা হয় পরেশ চন্দ্র সরকারকে । আর ভাইস চেয়ারম্যান করা হয় মৌসুমি দাসকে। অন্যদিকে দল কলনা পুরসভায় আনন্দ দত্তকে চেয়ারম্যান ও তপন পোড়েলকে ভাইস চেয়ারম্যান মনোনীত করে ।
এই দুই পুরসভার নব নির্বাচিত কাউন্সিলারদের এদিন ছিল শপথগ্রহম । কালনা পুরসভার কাউন্সিলারদের জন্য কালনার একটি হলে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তৃণমূলের ১৭ জন কাউন্সিলার ও একজন বাম কাউন্সিলার সেখানে উপস্থিত হন । তবে শপথ গ্রহণের আগে থেকেই সেখানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়ায় । এক পক্ষ দলের মনোনিত কাউন্সিলারকে চেয়ারম্যান করার দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে । অপর পক্ষ দলের ঘোষিত চেয়ারম্যানের বিরোধিতায় স্বোচ্চার হয় । এই খবর পেয়েই আসেন স্বপন দেবনাথ ও পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি তথা কলনা পুরসভার দলীয় পর্যবেক্ষক ও বিধায়ক অলোক মাঝি । অনেক বুঝিয়েও এই দুই তৃণমূল নেতার কেউ-ই বিক্ষুব্ধদের বাগে আনতে পারেন না । এই পরিস্থিতিতে শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান হলের বাইরে দলের কর্মীদের নিয়ে ধর্ণায় বসে পড়েন অলোক মাঝি । সময় গড়ানোর সাথে সাথে উত্তেজনা আরও চরমে ওঠে । কালনার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে উত্তেজনা সামাল দেয় ।এরই মধ্যে স্বপন দেবনাথের সঙ্গে ব্যাপক বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায় কালনা পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলার অনিল বসুর । বাকবিতণ্ডা চলার সময়েই তিনি আবার স্বপন দেবনাথের সামনেই ওই হলের দোতলার বারান্দা থেকে ঝাঁপ মারাতে উদ্যত হন । মন্ত্রীর চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও শপথ গ্রহনের পর বিক্ষুব্ধ ১২ জন কাউন্সিলার চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভোটাভুটির দাবি তোলেন । ভোটাভুটিতে তাঁরা আনন্দ দত্তকে হারিয়ে দিয়ে তপন পোড়েলকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন ।
তবে বিক্ষুব্ধদের দলের সিদ্ধান্তকে এই ভাবে চ্যালেঞ্জ ছোড়াটা বরদাস্ত করেনি তৃণমূল নেতৃত্ব । পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষ তথা মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস এদিন সন্ধ্যায় জানিয়ে দেন ,বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলারদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া তপন পোড়েলকে কালনা শহর সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল । একই সঙ্গে তাঁকে দল থেকেও বহিস্কার করা হল বলে অরুপ বিশ্বাস জানিয়ে দেন’।
এদিন বর্ধমান পৌরসভার কাউন্সিলারদের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানেও ক্ষোভ বিক্ষোভের আঁচ প্রকাশ্যে চলে আসে । ভেটে জিতে কাউন্সিলার হয়েও শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে হাজির হন নি অরুপ ও বসির আহমেদ । একটি ফৌজদারি মামলায় জামিন না পাবার জন্য বসির আহমেদ শপথ নিতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে । তবে বর্ধমান শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা নব নির্বাচিত কাউন্সিলার অরুপ দাস চেয়ারম্যান হতে পারার ক্ষেভে এদিন শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে হননি বলে খবর । মঙ্গলবারই অরুপ দাস সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে দেন , দলের সিদ্ধান্তে তিনি অপমানিত হয়েছেন। তাই তিনি শহর তৃণমূল সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেবেন । কাউন্সিলার পদ থেকে অব্যাহতি নিতে পারেন । যদিও দলীয় নেতৃত্ব অরুপ দাসের এই সব বক্তব্যকে কোন আমল দিতে চান নি ।