শোকাচ্ছন্ন সুর পরিবারঃ প্রয়াত লতা মঙ্গেশকর
TODAYS বাংলাঃ বয়স হয়েছিল ৯২। একের পর এক গান, গুণমুগ্ধ বিশ্বজোড়া শ্রোতা। প্রবল জনপ্রিয়তা সবকিছু একপাশে রেখে, সবকিছু ছেড়ে সপ্তাহের শেষ দিনের শুরুতেই চলে গেলেন লতা মঙ্গেশকর। প্রয়াত সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। লতা মঙ্গেশকরের শারীরিক অপূর্নতা নিয়ে চিন্তা করে গিয়েছে অনুরাগীরা।শারীরিক অবস্থা আগের থেকে আরও আশঙ্কাজনক হয়ে পড়েছিল। গত সপ্তাহেই তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে বাইরে আনা হয়েছিল। পুনরায় তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল । নতুন বছরের জানুয়ারির প্রথম দিকে তিনি করোনা সংক্রমিত হয় তারপর থেকে কেটে গেছে প্রায় একমাস। তিনি ২৭ দিন ধরে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে বারংবার পরিবর্তনে উদ্বিগ্ন ছিল দেশবাসী।
সরস্বতী মায়ের বর্ণনার দিনে মন খারাপ অনুরাগীদের। তিনি ভেন্টিলেশনে থাকা চিকিত্সকদের সম্পূর্ণ নজরদারিতে ছিলেন। তাঁর চিকিত্সার দায়িত্বে ছিলেন প্রীত সামদানি এবং তাঁর টিম। জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখে তিনি করোনা পজিটিভ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু আবার শারীরিক অবনতি দেখা দেয়। লতা মঙ্গেশকরের সুস্থতা কামনায় সারা দেশে বহু অনুরাগী নানান যজ্ঞের আয়োজন করে ,কেউবা করেন মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ। সমস্ত ভারতবাসী চেয়েছিলেন তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না । সবাইকে ছেড়ে ঘুমের দেশে চলে গেলেন সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর।
১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করে। তাঁর অবদানের জন্য ২০০১ সালে তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত করা হয়। এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মীর পর এই পদক পাওয়া তিনিই দ্বিতীয় সঙ্গীতশিল্পী। ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাঁকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের অফিসার খেতাবে ভূষিত করে। সুরসম্রাজ্ঞীর ঝুলিতে রয়েছে ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, ৪টি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ২টি বিশেষ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি ।
ভারতীয় শ্রোতাদের তাঁকে আলাদা করে মনে রাখতে হবে না। যতদিন বলিউড মিউজিক জীবিত থাকবে মানুষের স্মৃতিতে, ততদিন তাঁর কণ্ঠের হাজারেরও বেশি গান নিয়ে তিনি বলিউড মিউজিকেরই আর এক নাম হয়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। তিনিই বলিউড সঙ্গীত, সর্বতোভাবে, ভালো, মন্দ সবটুকু নিয়েই। লগ যা গলে (১৯৬৪) আল্লা তেরো নাম (১৯৬১) অ্যায় মেরে বতন কে লোগো (১৯৬৩) লুকাছুপি (২০০৬) তুঝসে নারাজ নেহি (১৯৮৪) সহ অসংখ্য গান আজীবন স্মরণে থাকবে সকলের। ১৯৭৭ সালে গুলজারের লেখা ও লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া কিনারা ছবির গানের প্রত্যেকটি শব্দই যেন ভারতীয় সঙ্গীতের অন্যতম কিংবদন্তির কথাই বলে। সকলকে ছেড়ে চিরনিদ্রায় সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর।