জীবনটাই তো খেলা: মমতা
TODAYS বাংলা, সৌরভ দত্ত: মোহনবাগান ক্লাবের নবনির্মিত ক্লাব তাঁবুর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সবুজ মেরুন পাড়ের শাড়ি পড়ে ক্লাব তাঁবুর দ্বারোদ্ঘাটন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন ক্লাবের সচিব দেবাশিস দত্ত এবং ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চ্যাটার্জি। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম মোহনবাগান ক্লাবে পদার্পণ করেন মমতা ব্যানার্জি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান সুব্রত ভট্টাচার্য। তাঁর হাতে লাইফটাইম মেম্বারশিপ কার্ড তুলে দেন ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চ্যাটার্জি। বিশেষ স্মারক দেন সচিব দেবাশিস দত্ত। ক্লাবের পক্ষ থেকে ফুটবল তুলে দেন মানস ভট্টাচার্য। সেই বলে সই করেন মমতা ব্যানার্জি, যা রাখা হয়েছে মোহনবাগান ক্লাবের ট্রফির ক্যাবিনেটে। সেখানে একই সঙ্গে স্থান পায় স্মারকও। ‘দিদি’র দেওয়া আর্থিক অনুদানে একটি স্পোর্টস লাইব্রেরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ছ’মাসের মধ্যে তৈরি হবে এই গ্রন্থাগার। শুধুমাত্র সদস্যরা নয়, বাইরের লোকও গবেষণার খাতিরে এই লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়াও নেওয়া হবে একাধিক কর্মসূচি। মাসের শেষে কর্মসমিতির বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনা হবে।
ক্লাবে পা রেখেই মোহনবাগানের ভূয়সী প্রশংসা করেন, তুলে ধরেন ক্লাবের ইতিহাস। সবুজ মেরুন মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফিরে যান স্মৃতির সরণিতে। মনে পড়ে যায় মায়ের কথা,মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘মোহনবাগানের কথা মনে পড়লে প্রথমেই আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। অনেকেই হয়তো জানেন না আমার মা মোহনবাগানকে সমর্থন করতেন। একবার পেলে এসেছিল কলকাতায় খেলতে। সারা বাংলা উথাল পাথাল হয়ে গিয়েছিল। আর আমার মা ম্যাচের আগে কালীঘাটে পুজো দিতে পাঠিয়েছিল। মোহনবাগানের খেলা হলেই আমার মা রেডিও নিয়ে বসে যেত, আর কালীঘাটে পুজো দিত।
আমার মা মোহনবাগানের সমর্থক ছিল। এখন দেখি আমার দাদা ইস্টবেঙ্গল করে। আর মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কেউ নেই বলে আমি মহমেডান করি।’ সবুজ মেরুন পাড়ের শাড়িতে এসে মোহনবাগান জনতার মন জয় করে নেন। এই প্রসঙ্গে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘আমার শাড়ি ডিজাইন আমি নিজেই করি। বাজারে এত সরু পাড়ের শাড়ি পেতে সমস্যা হয়। তাই মোহনবাগান ক্লাবের অনুষ্ঠানে আসার আগে এই শাড়ি ডিজাইন করিয়েছি। কিন্তু লাল হলুদ শাড়ি আমার কাছে নেই।’
এদিন ক্লাব তাঁবুর উদ্বোধনে এসে মোহনবাগানকে ৫০ লক্ষ টাকার অনুদানের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। গতকাল রাতেই শহরে ফিরেছেন সোনা জয়ী অচিন্ত্য শিউলি। স্কোয়াশে ব্রোঞ্জ জিতে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন সৌরভ ঘোষালও। ১৬ আগস্ট খেলা দিবসের দিন তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে আর্থিক অনুদান। অচিন্ত্যকে ৫ লক্ষ এবং সৌরভকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। নির্বাচনের আগে তাঁর মস্তিষ্ক থেকেই বেরিয়েছিল ‘খেলা হবে’ স্লোগান।
মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘খেলা হবে কেন বলেছিলাম জানেন? জীবনটাই তো খেলা। জন্ম কবে হবে জানা যায়, কিন্তু মৃত্যু কবে কেউ জানে না। যতদিন বাঁচব, জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে খেলতে খেলতে জীবনটা কেটে যাবে। মোহনবাগানের ইতিহাস কেউ ভুলতে পারবে না। একজন ছাড়া সবাই খালি পায়ে ইংরেজদের বুটের সঙ্গে লড়াই করেছিল। মোহনবাগান খেলার মধ্যে দিয়ে দেশের আন্দোলন, জাতীয়তাবোধ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। মোহনবাগানের তুলনা মোহনবাগান নিজেই। মোহনবাগানের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি।’

মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘আজ আমরা একটা সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমাদের ক্লাবতাঁবু উদ্বোধন করতে করতে দিদি বললেন ওনার শাড়ির পাড়টা সবুজ মেরুন। এত ক্রীড়াপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রী আমি দেখিনি। দিদির থেকে সবসময় সাহায্য পেয়েছি। ফ্লাডলাইটে অনুশীলন, বিশ্বমানের জিম, ড্রেসিংরুম, সবই হয়েছে দিদির জন্য। আমরা একটা স্পোর্টস লাইব্রেরি করব। লনটা হেরিটেজ লন হবে। আমরা ক্লাবে স্পোর্টস সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই।’ এদিন ক্লাবতাঁবুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক, সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় এবং বিশিষ্ট তৃণমূল নেতা এবং ক্লাবের সহ সভাপতি কুণাল ঘোষ। এছাড়াও ছিলেন মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলাররা।