April 19, 2025 | Saturday | 11:17 PM

ইউক্রেন জুড়ে ক্রমশ আধিপত্য কায়েম করতে শুরু করেছে রুশ সেনা

0

TODAYS বাংলাঃ ইউক্রেন জুড়ে ক্রমশ আধিপত্য কায়েম করতে শুরু করেছে রুশ সেনা। ইতিমধ্যে তাদের দখলে এসেছে বেশ কিছু এলাকা। যার মধ্যে অন্যতম হল, চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুত্‍ কেন্দ্র। ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের পরে প্রেসিডেন্সিয়াল উপদেষ্টা মিখাইলো পেডোলিয়াক বলেছেন, ‘এই হামলা চলছে কোনও কারণ ছাড়াই। ইউরোপের জন্য সবচেয়ে বড় যেসব হুমকি তার অন্যতম এই হামলা।’

১৯৮৬ সালে চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুত্‍ কেন্দ্রে বিস্ফোরণের ঘটনায় চমকে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। মানব ইতিহাসে এটাই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়। মারা যান প্রচুর মানুষ। আহতও হন অনেকে। সেই ক্ষত আজও বহন করে চলেছেন সেখানকার মানুষ।

চেরনোবিল বিস্ফোরণে বিকলাঙ্গ হয়ে যান অসংখ্য মানুষ। সেই স্মৃতি বুকে নিয়ে সতর্ক করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ার আগ্রাসন যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ওই রকম বিপর্যয় আরও ঘটতে পারে।’ সেই সঙ্গে তিনি ট্যুইটে বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিরোধকারীরা তাদের জীবন দিচ্ছেন, যাতে ১৯৮৬ সালের মতো ট্রাজেডি আর না ঘটে। এটা পুরো ইউরোপের বিরুদ্ধে পুতিনের যুদ্ধ ঘোষণা।’ একই রকম সতর্কতা দিয়ে ইউক্রেনের বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, সেই চেরনোবিলেই আরেকটি ‘ইকোলজিক্যাল’ বিপর্যয় ঘটতে পারে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত এই এলাকায় ১৯৮৬ সালের বিস্ফোরণের পর চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে ৩২ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের এলাকাকে ‘এক্সক্লুশন জোন’ বা এড়িয়ে চলতে হবে এমন এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৩৬ বছর ধরে সেখানে জীবনধারণ নেই বললেই চলে। কারণ, বিদ্যুত্‍ কেন্দ্রের পারমাণবিক চুল্লি বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তা মানুষের বসবাসের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে। ২০০০ সালে ওই বিদ্যুত কেন্দ্রের অন্য দু’টি চুল্লিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন থেকে বন্ধ অবস্থাতেই রয়েছে চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুত্‍ কেন্দ্র।

১৯৮৬ সালের মারাত্মক বিস্ফোরণের পর ওই অঞ্চলে তেজক্রিয়তা ভয়াবহ মাত্রায় দেখা দেয়। এই নিয়ে ২০১৯ সালে এইচবিও একটি মিনি সিরিজ করে। এর পর সেখানে যাওয়ার জন্য আকৃষ্ট হতে শুরু করেন পর্যটকরা। বৃহস্পতিবার ওই এক্সক্লুশন জোনে প্রবেশ করে রাশিয়ান সেনারা। সেখানে রাশিয়ান সেনারা পারমাণবিক কেন্দ্রের কর্মীদের জিম্মি করে রেখেছে বলে রিপোর্ট পেয়েছে হোয়াইট হাউজ।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থান চেরনোবিলের। সেখানে দখল নেওয়ার মধ্য দিয়ে আগ্রাসী রুশ বাহিনীর তাদের অভিযান জোরাল করতে পারে। তবে, ট্রুম্যান ন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রজেক্টের নিরাপত্তা বিষয়ক ফেলো সামান্থা টার্নার বলেছেন, ‘ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মধ্যে লড়াইয়ের গুরুত্ব নির্ধারণ করার কিছু নেই। যদিও, এর মধ্য দিয়ে রাশিয়ান বাহিনী ডনিপ্রো নদীর করিডোর সুবিধা পাবে। এই নদীটি উত্তর থেকে বেলারুশে প্রবেশ করেছে।’

এদিকে, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কো নিজেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন। তাই চেরনোবিল রুট রাশিয়ান সেনাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন করিডোরে তাদের সেনাদের মুভমেন্টের পথ খুলে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে রাশিয়া। সামান্থা মনে করেন, ‘ওই এলাকায় কোনও মানুষ বাস করেন না। তাছাড়া চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুত্‍ কেন্দ্র এখন আর সক্রিয় নয়। তাই সেখানে সক্রিয় যুদ্ধ থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে পারে।’

ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রফেসর ক্লেয়ার কর্কহিল বলেছেন, ‘রাশিয়ানরা পারমাণবিক বিষয়ে অপারেট করতে বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম।’ চেরনোবিলে আন্তর্জাতিক পরিষ্কার বিষয়ক মিশনে গত ৬ বছর ধরে কাজ করছেন কর্কহিল। এ সময় তিনি তিনবার ওই স্থান সফরও করেছেন। এর মধ্যে সহকর্মীদের নিয়ে তিনি তেজস্ক্রিয় চুল্লির আশপাশে ৩২ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার ডোম নির্মাণ করেছেন। এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল ৩০টি দেশ আর এতে খরচ হয়েছে ১৫০ কোটি ডলার। কিন্তু কর্কহিল এখন উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এই ভেবে যে, ইউক্রেনে এই কার্যক্রম এখন কার্যত থেমে যাবে। কর্কহিল বলেন, ‘৩০ বছর আগে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এখনও আমরা সবকিছু পরিষ্কার করতে পারিনি। এখনও যা অবস্থা তাতে ৫০ বছরের কর্মসূচি প্রয়োজন। যদি মানুষজন সেখানে ঠিকমতো কাজ করতে না পারেন, তেজস্ক্রিয় পদার্থে ডিকম্পোজিশনে অগ্রগতি না হয়, তাহলে তা বাস্তবিকই একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *