জগৎ মুখার্জ্জী পার্কের থিমের ভাবনা বর্ষামঙ্গল
TODAYS বাংলা: নগর সভ্যতার শব্দ ভান্ডারে “বৃষ্টি” আর “বিরক্তি” প্রায় একই সাথে উচ্চারিত হলেও ভারতের মত কৃষি প্রধান দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতে বর্ষার মঙ্গলময় রূপ তর্কাতীতভাবেই স্বীকৃত। বাংলার শারদোৎসবের কাল নিরূপণেও বর্ষার অব্যবহিত পরেই শরতকাল তাই চিরকাল বিশেষ তাৎপর্য বহন করে আসছে।
অকালবোধনের কাহিনীও তাই মূল বাল্মিকী রামায়ণে না থাকলেও কৃত্তিবাসি রামায়ণে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা প্রধানত পূর্ব ভারতেই সর্বাধিক সমাদৃত। মুঘল সম্রাট আকবরের রাজস্ব আদায়ের সময়ও ছিল এই বর্ষা কালের শেষে শরতের সূচনায় ভাদ্র মাসে। তাই, গ্রীষ্মের দহন বেলা শেষে, “আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে” আকাশের জলভরা মেঘ যখন বিরহী যক্ষের বার্তা নিয়ে মাটির বুকে নেমে এসে প্রকৃতিকে সুজলা-সুফলা, শস্য শ্যামলা করে তোলে, বাংলার প্রতিটি ক্ষেত যখন সোনার ফসলে প্লাবিত হয়, তখনই শারদ লক্ষ্মীর আবাহনের আয়োজন শুরু হয় ঘরে ঘরে, মহল্লায় মহল্লায়।
বর্ষার এই কল্যাণময়ী রূপ আজ বিস্মৃত প্রায়। নগর কেন্দ্রিক ব্যাবস্থায় তো বর্ষা হল কর্মনাশা। জল-কাদায় ঘর্মাক্তকলেবরে জনজীবনের নাভিশ্বাস। কিন্তু গ্রাম প্রধান দেশে কৃষিই যেখানে জীবন জীবিকার ভিত্তি স্বরূপ, সেখানে অর্থনৈতিক বিকাশের মূল চালিকা শক্তি হল “বর্ষা”। ভারতীয় শাস্ত্রেও তাই দেবী দুর্গার আরেক নাম ” শাকম্ভরী “- যিনি শাক বা খাদ্য প্রদানকারিনী, যা জীবকূলের শক্তি বৃদ্ধি করে আর সেই শক্তিতেই অসুর নাশ হয়।
জগৎ মুখার্জ্জী পার্কের এবছর অতিমারি অতিক্রান্ত কালে জীবকূলের রক্ষাকর্ত্রী দেবীর আশীর্বাদ স্বরূপ যে বর্ষা ঋতু, তারই জয়গাথা চিত্রিত হবে শিল্পী সুবল পালের “বর্ষামঙ্গল” ভাবনায়। দুবছর অতিমারির বিধি-নিষেধ পেড়িয়ে এ বছর আবার আমরা উৎসবের স্রোতে ভাসব, আনন্দের বাণ ডাকবে জাত ধর্ম নির্বিশেষে সবার মনে, ঠিক যেমন নব বর্ষার জল ভরা মেঘ থেকে যখন প্রথম বৃষ্টি নামে দহন-ক্লান্ত মাটির বুকে। তার সাথে এবারের উপরি পাওনা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি। সব মিলিয়ে প্রশান্তির সুশীতল স্পর্শ-ই অনুভূত হবে মন্ডপ সজ্জার পরতে পরতে। আনন্দের স্রোতে ভাসতে ভাসতে আপনারা সকলে আসবেন বর্ষণ মুখর জগৎ মুখার্জ্জী পার্কের উৎসব প্রাঙ্গণে। মায়ের মঙ্গল হস্তের স্পর্শ আপনাদের সকল সংকট মোচন করুক।
Advertise